এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > বিজেপির হাত থেকে গড় বাঁচাতে নেতাদের লুকিয়ে রাখছে তৃণমূল, জোর চাঞ্চল্য রাজ্যে

বিজেপির হাত থেকে গড় বাঁচাতে নেতাদের লুকিয়ে রাখছে তৃণমূল, জোর চাঞ্চল্য রাজ্যে

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোরালো হচ্ছে। বিগত বাম দশকে দীর্ঘদিনের লাল দুর্গ হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় 2011 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনামিতে প্রায় ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় বাম শিবির। কুসুমন্ডির একটা এমএলএ আসনে টিমটিম করে লালবাতি জ্বললেও বাকি পাঁচটি আসনেই নিজেদের ক্ষমতা কায়েম রাখে ঘাসফুল শিবির।

কিন্তু বিপর্যয়টা শুরু হয় 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে। যেখানে একদিকে থাকেন নিজেকে জেলার চিত্র বলে প্রচার করা তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র, আর অন্যদিকে রাজ্যের পূর্ত দপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী শংকর চক্রবর্তী। শংকরবাবুর দলে অবশ্যই তৎকালীন বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা থেকে শুরু করে মাহমুদা বেগম, সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, গঙ্গারামপুরের বিধায়ক সত্যেন রায়, একাধিক পদাধিকারীকে পাশে পান তিনি বিপ্লব বিরোধিতায়।

কিন্তু এই খেলার পরিণাম তৃণমূলের পক্ষে শুভকর হয়নি। 2016 সালে শংকর চক্রবর্তীকে জেলা তৃণমূল সভাপতির দায়িত্ব দিয়েও প্রবল ভরাডুবির সম্মুখীন হতে হয় ঘাসফুল শিবিরকে। 5 আসনে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল দুটি আসন দখল করেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। আর সেদিনই তৎকালীন তৃণমূলের নেতা বিপ্লব মিত্র প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, জেতানোর ক্ষমতা তার না থাকলেও হারানোর জন্য তিনি একাই যথেষ্ট।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এরপরই পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা জুড়ে প্রায় বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে একক ক্ষমতা দখল করে রাখে বিপ্লব মিত্রর তৃণমূল। বলাই বাহুল্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রায় সকলেই বিপ্লব মিত্রের ঘনিষ্ঠ ছিল। কিন্তু ঈশান কোণে মেঘ জমে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে। 42 এ 42 ডাক দিয়েছিলেন মমতা। আর তার মধ্যে একটি আসনের রক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন বিপ্লব মিত্র। কিন্তু আশা থাকলেও নিজের জন্য বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট পাননি বিপ্লববাবু। তাই অন্যের বিয়ের বরকর্তা সেজেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব মিত্রকে।

বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে অর্পিতা ঘোষকে যে তিনি ভালোমতো মেনে নিতে পারেননি, তার প্রমান ঘটে নির্বাচনের ফলাফলেই। জেলার তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে লিড পেলেও বিপ্লব মিত্রের খাসতালুক গঙ্গারামপুরে তৃনমূল লিড পায়নি। যার কারনে বড়সড় মার্জিনে পরাজয় ঘটে অর্পিতা ঘোষের। যার জেরে প্রবল ক্ষুব্ধ হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি থেকে বিপ্লব মিত্রকে সরিয়ে সেখানে দায়িত্ব দেন অর্পিতা ঘোষকে।

এর ফলে প্রবল অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে এককালে তৃণমূলের শেষ কথা হিসেবে পরিচিত বিপ্লব মিত্র গেরুয়া উত্তরীয় গায়ে পড়ে নেন। তবে শুধু একা নয়, সাথে সাথে জেলা পরিষদের সভাধিপতি সহ 9 জন সদস্যকেও গেরুয়া শিবিরে যোগদান করান তিনি। আর এতেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জুড়ে তৈরি হয় এক নতুন সংকট। বিপ্লব মিত্রের গড় হিসেবে পরিচিত গঙ্গারামপুর পৌরসভার রাশ কার হাতে থাকবে! তৃণমূলের নাকি বিপ্লব মিত্রের! এই নিয়েই শুরু হয় জোর জল্পনা।

প্রসঙ্গত, বিপ্লব মিত্র দলত্যাগ করার পরেই অর্পিতা ঘোষ বিপ্লব মিত্রের ভাই তথা গঙ্গারামপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্র সহ আরও দুই বিপ্লব ঘনিষ্ঠ নেতাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেন। আর এতেই প্রশ্ন উঠে যায়, গঙ্গারামপুর পৌরসভা নিজেদের দখলে নিয়ে তারপর কি এরকম সিদ্ধান্ত নিলেন অর্পিতাদেবী! নাকি গোটা ব্যাপারটাই বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো হয়ে গেল!

কারণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, অর্পিতা ঘোষ 9 জন সদস্য নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু সরকারকে দিয়ে অনাস্থা আনলেও ভোটের মরশুমে বিপ্লব মিত্রের ভাই তথা গঙ্গারামপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্রের বিরুদ্ধে আনা সেই অনাস্থা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে চিন্তিত খোদ তৃণমূলের কর্তা ব্যক্তিরা। তাই এবার ঘর বাঁচাতে প্রবল বিপ্লব বিরোধী বলে পরিচিত দোর্দণ্ডপ্রতাপ শুভাশিষ পাল ওরফে সোনাকে দিয়ে তৃণমূলের আস্থাভাজন কাউন্সিলরদেরকে কলকাতায় নির্বাসিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

তাহলে কি বিপ্লব মিত্রের ভয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের এহেন সিদ্ধান্ত! রাজ্যের শাসকদলে থাকা তৃণমূল কংগ্রেস কি জেলার মাটিতেই নিজের কাউন্সিলারদেরকে সুরক্ষা দিতে পারছেন না! যার জেরে জেলা ছেড়ে একেবারে বাংলা রাজধানীতে নিয়ে গিয়ে তুলতে হল গঙ্গারামপুরের কাউন্সিলরদেরকে! এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। প্রশান্ত মিত্র জানিয়েছেন, তিনি অতিসত্বর আস্থা ভোটের ডাক দেবেন। আর যেখানে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবেন বলে প্রবল আত্মপ্রত্যয়ী প্রশান্তবাবু।

অন্যদিকে তৃণমূল নেতা শুভাশিষ পাল বলেন, “বিপ্লব মিত্রর সঙ্গে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। জনগণও ওনার সঙ্গে নেই। উনি শুধু আওয়াজের উপরে করছেন। আগামীদিনের অনাস্থা ভোটে মুখ থুবরে পড়বে প্রশান্ত মিত্র। কিন্তু জেলায় কাউন্সিলরদের বিভিন্নভাবে ভীতি প্রদর্শন করা হতে পারে। সেজন্যই তাদেরকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।” এদিকে এই প্রসঙ্গে সদ্য তৃণমূল ত্যাগী বর্তমান বিজেপি নেতা বিপ্লব মিত্র বলেন, “এসব ভুয়ো খবর। দু-একদিনের মধ্যেই আস্থা প্রমাণিত হবে। প্রশান্ত মিত্রই চেয়ারম্যান থাকবেন।”

এদিন তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এক দেড় মাসের মধ্যেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তৃণমূল কংগ্রেস সাইন বোর্ডে পরিণত হবে। কারণ গত 2014 সালে যে অর্পিতা ঘোষকে তিনি জিতিয়েছিলেন, তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা সম্পর্কেও বিপ্লব মিত্রের যথেষ্ট ধারণা রয়েছে। তিনি এও জানেন, কোনখানে আঘাত করলে বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়বে জেলা তৃণমূলের সংগঠন।

সবমিলিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মধ্যে নতুন আরও একটা ভাটপাড়ার গন্ধ পাচ্ছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। যা নিয়ে রীতিমত চিন্তার ভাঁজ করতে শুরু করেছে সর্বসাধারণের কপালে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!